ভূগোল বিজ্ঞান না কলা তা নিয়ে আছে অনেক বিতর্ক । অবশ্য বিতর্কের অনেক কারন ও রয়েছে । কারনের মূল জায়গাটা আসলে এর সংগার মধ্যে রয়েছে । তাছাড়া জতিলতা রয়েছে এর বিষয়বস্তু ঘিরে ।অনেক সময় একজন ব্যক্তির মতামত কে ঘিরে আমরেয়া সামগ্রীক ভূগোল কে বিবেচনা করে থাকি যা মোটেই সঠিক না ।
ভুগোল বা যেকোন বিষয়ের ক্ষেত্রেই যেকোন বিষয় বস্তু নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা যায় । কোন বিষয় তা কিভাবে সমিক্ষা করে তা নিয়ে বিবেচনা করা যায় না যে বিষয়টি কি বিজ্ঞান কিনা বরং সমীক্ষা টি কিচভাবে করা হয়েছে সে অনুসারে বোঝা যাবে এটার বৈজ্ঞানিক যৌক্তিকতা । এমন অনেক সামাজিক বিশয় আছে যা বৈজ্ঞানিক ভাবে সমাধান দেয়া সম্ভব বরং বর্তমানে প্রায় সব কিছুতেই বৈজ্ঞানিক ভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষন সম্ভব ।
পিউর বিজ্ঞান হিসেবে আমরা যে বিষয় গুলোকে মনে করি তা হচ্ছে পদার্থ বিজ্ঞান ,রসায়ন বিজ্ঞান , গনিত , উদ্ভিদ বিজ্ঞান ,প্রাণি বিজ্ঞান প্রভৃতি । এখন বিজ্ঞান সমর্থন করে যা দেখা যায় এবং প্রমান করা যায় । কিন্তু এমন অনেক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে যা আদৌ ব্যাখ্যা করা যায়নি । তাই বলে সেগুলোকে বিজ্ঞান থেকে বাদ দেয়তা হয়নি । এই সব বিতর্কের জন্য ভূগোলে মূলত দুইটি শাখা করা হইয়েছে ।
১) প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ২) মানবিক বিজ্ঞান
প্রাকৃতিক বিজ্ঞান , এখানে মূলত ভূগোলের সে বিষয় বস্তু গুলোকে যুক্ত করা হয়েছে যেগুলো বিজ্ঞানের পিউওর শাখা যেমন গনিত ,পদার্থ বিজ্ঞান ,রসায়ন ,বায়োলজি এই বিষয় গুলোকে যুক্ত করে । এখানে যা আছে তার গবেষনা প্রক্রিয়া এবং উপাত্ত বিশ্লেষন ধরন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হয় । যদিও ভূগোল কে কখনও একটি আলাদা ভাবে বিবেচনা শাখা আপনি করতে পারবেন না কারন এর প্রতিটি শাখা একটি অপরটির সাথে ওতপ্রতো ভাবে জড়িত ।
মানবিক ভূগোল, ভূগোলের এই শাখায় মানবিক বা সমাজ বিজ্ঞানের বিষ্যবস্তু রয়েছে । এখানেও সমিক্ষা হয় । তবে সমাজ বিজ্ঞানের সমিক্ষা সাধারণত ল্যাবে করা যায় না । তবে যেকোন তথ্য পরিবেশন ও সাজ শয্যায় মানবিক ভূগোলের উপাদান গুলো প্রয়োজন ।
কোন বিষয়কে তখন বিজ্ঞান বলা যায় যখন তা যুক্তিতর্কের নিয়ম মেনে চলে । আবার এটাও সত্যি যে যুক্তিতর্ক শুধু প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একার সম্পত্তি নয় বরং তা কলা বিভাগেরও অংশ । একটি আলোচ্য বিষয় হচ্ছে বৈজ্ঞানিক যুক্তি এই বিষয়গুলো তাই একটু এলোমেলো । একজন বিজ্ঞানী কিংবা ভূগোলবিদ এই নিয়ে অনেক তর্ক করলেও প্রত্যেকের জায়গা থেকে এমন একটি বিষয় নিশ্চিত ছিল যে ভূগোল আদি কাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত অনেক বিষয় নিয়ে এগোচ্ছে এবং ভূগোলের বিষয়বস্তু সম্প্রসারণ করছে এবং এর সাথে যুক্ত হয়েছে এর নতুন নতুন বিশ্লেষণ পদ্ধতি ।
পূর্বে যা মানবিক ভূগোল হিসেবে বিবেচিত হতো বর্তমানে তা প্রাকৃতিক ভূগোলের অংশ । এই পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্লেষণ পদ্ধতি বা সমীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন এবং সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার সাথে মানুষের ভূগোল নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করার সম্প্রসারণ । সময়ের পরিবর্তনে নতুন নতুন বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ভূগোলে যুক্ত হচ্ছে । যেমন আগে জনসংখ্যা ভূগোল যদিও মানবিক ভূগোলের একটি বিষয় কিন্তু যখন তার সমীক্ষা করা হয় তখন তা বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত হচ্ছে । এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান গণিত পিওর সাইন্স এর অন্তর্ভুক্ত। যুক্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিরীক্ষার একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ।
একমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে কিন্তু মিলিয়ে নেয়া যায় প্রকল্পটির ভুল কিনা শুদ্ধ এবং অনেকগুলো প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী কোনটা এখন পর্যন্ত গুণগত পদ্ধতিতে উপর বেশি জোর দেয়া হয় যার ফলে সামাজিক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সঙ্গে ভূগোলিক পদ্ধতি তেমন কোন তফাৎ নেই । অতীতের বর্ণনামূলক ভূগোলের কাল থেকে আজ পর্যন্ত ব্যাখ্যা মূলক দৃষ্টিভঙ্গি এগিয়ে এসেছে । ভূগোলকে সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে বৈজ্ঞানিক বলে রায় দিয়েছেন অনেক ভূগোলবিদ ,পণ্ডিতেরা । শুধুমাত্র ভৌগোলিক বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করলেই নয় কিংবা এমন কিছু যা পরিমাণ গত তাই বিজ্ঞান হয়ে যায়না । ভূগোল কে অনেক ভাবেই বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া সম্ভব ,কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় তা হচ্ছে অন্যান্য বিজ্ঞানের মধ্যে ভূগোলের স্থান কোথায় । ভুগোল কি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে নাকি সমাজ বিজ্ঞান । বিজ্ঞান সাধারণ সত্যের কথা ধরা হয় যা সবসময়ই সত্যি কিন্তু সমাজবিজ্ঞানে এ ধরনের ভবিষ্যৎবাণী করার সম্ভাবনা একদমই কম ।
এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সাধারণত এবং বিশ্বাস করা যায় এমন কোন তাত্ত্বিক প্রণালীর সুসংবদ্ধ অঙ্গ তাকেই বৈজ্ঞানিক সূত্র বলা চলে ,আর যা কে বিজ্ঞান বলা চলে । তবে এ ও সত্যি এই সংখ্যার অবস্থান যদি কঠোরভাবে মানা যায় তাহলে দেখা যাবে বিজ্ঞানের কোন শাখায় এই বৈজ্ঞানিক সূত্র গড়ে তোলা যাচ্ছে না । সেক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সূত্র শব্দটির ব্যবহারিক প্রয়োগের সময় অনেক বৈজ্ঞানিক একটু চুপ থাকেন । প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান কে জোড়া লাগিয়ে একটি একক বিষয় হিসেবে পরিণত হয়েছে ভুগোল । প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান উভয় কে নিয়েই ভুগোলের চিন্তাভাবনা সৃষ্টি হয়েছে । যদিও কতগুলো বিষয়গুলোর মধ্যে সাধারণত দেখা যায় না সামাজিক বিজ্ঞানের উপস্থিতি । অনেক ভূগোলবিদ ভূগোলকে একমাত্র প্রাকৃতিক ভূগোলের দিকে নিয়ে গেছেন আবার কেউ ভূগোলকে বিজ্ঞান বলতে অস্বীকার করেছেন ।
ভূগোল কে বর্ণনা করতে গিয়ে কোন কোন ভূগোলবিদ বলেছেন যে ভূগোল হচ্ছে ফিল্ডস আইন বা ক্ষেত্রীয় বিজ্ঞান । আবার কেউ কেউ মনে করেন প্রাকৃতিক বিষয়গুলি যেহেতু ভূগোলের কেন্দ্র বা ভিত্তিভূমি তাই এটি প্রাকৃতিক বা এনভিরনমেন্টাল সাইন্স । আবার কেউ কেউ মনে করেন যেমন বিজ্ঞানী ডার্বি,১৯৬৯ , ভূগোল বিজ্ঞান পরিমাপের প্রয়োজন আছে আবার ভূগোল এই অর্থে যে সকল তথ্যের উপস্থাপনা হওয়া দরকার তা নির্বাচিত রুচিসম্মত সুচিন্তিত, সে ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানকে আমরা অগ্রাহ্য করতে পারিনা । বর্তমান যুগে প্রাকৃতিক সমাজ বিজ্ঞানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান পার্থক্য মেলানোর চেষ্টা করছে ভূগোল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একমাত্র ভূগোলের বিষয় অনেক ভূমিকা রাখে । ভূগোল সমীক্ষার পদ্ধতিতে গত কয়েক দশকে বিপুল পরিবর্তন এসেছে । যদিও এখনো নানাবিধ আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে যেমন উত্তরাধুনিকতাবাদ এবং নারীবাদী চিন্তা আরো রয়েছে নতুন নতুন কিছু বিষয় যা অদূর ভবিষ্যতে নানা পরিবর্তন আসতে পারে এবং আসবে ।
অতীতে ভূগোলের গ্রহণযোগ্যতা ছিল মানচিত্র প্রণালী , ব্যাখ্যা যুদ্ধ-বিগ্রহ এসব ক্ষেত্রে কিন্তু বর্তমানে ভুগোলের সবচেয়ে আলোচিত যে বিষয়গুলো তার মধ্যে রয়েছে ক্লাইমেট চেঞ্জ ,ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি । এক্ষেত্রে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার থেকে বাঁচাতে মানবজাতির ভূমিকা এবং মানুষকে সচেতন ও তার জন্য ভূগোল বিষয়টি ভূমিকাটি তাই এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ । পৃথিবীতে মানব সভ্যতার দীর্ঘ ইতিহাসে মানুষকে তার প্রতি পদে পদে ভূগোল জানতে হয়েছে । মানুষের প্রতিটি ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে ভূগোল যুক্ত যা সম্ভবত অল্প কয়েকটি অন্যান্য শিক্ষা বিষয়ের ক্ষেত্রে সত্য । একজন সাধারন পর্যটক , ব্যবসায়ী বা রাজনীতিবিদকে ও সামান্য কিছু ভুগোল জ্ঞ্যান রাখতে হয় ।
এছাড়াও একজন চাষী জানে তার গ্রামের মাটিকে, বাতাসে ধরন দেখে সে বুঝতে পারে যে বৃষ্টি আসছে কিনা কারণ তার কুঁড়েঘরে এ বছর আবার বাধতে হবে কিনা । অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে ভূগোলের আবেদন প্রায় সব জায়গায় । কেবল অঞ্চলভেদে নয় বরঞ্চ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে ওতপ্রোতভাবে । তাই ভুগোলকে কোন নির্দিষ্ট বিজ্ঞানে কিংবা সামাজিক বিজ্ঞানে আমরা যে অন্তর্ভুক্ত করব তার উপায় নেই । মার্কিন ভৌগলিক স্কীফার ১৯৫০ দশকের শুরুতে বলেন যে ভূগোল হচ্ছে ভূপৃষ্ঠের বিশেষ বিশেষ বিষয়ের বন্টন সংক্রান্ত সূত্র গড়ে তুলে ,এমন বিজ্ঞান হিসেবে ভূগোল কে দেখতে হবে ।
এখন এখন ভূগোল কেবল দৈশিক বন্টনে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে বড় আকারের বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা যার যার মতো করে ভূগোল কে দেখতে পারি তবে একথা মনে রাখতে হবে যে ভূগোল কারো একার বিষয় না একে নির্দিষ্ট কোন শ্রেণীতে ভাগ করা যাবেনা । এটাই সব সময় মনে রাখতে হবে যে , ভূগোল আদিকাল থেকে ছিল এখনো আছে এবং সামনেও থাকবে । এই সাথে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হবে, পরিবর্তন হবে এবং বিজ্ঞান ছাড়া যেমন অসম্ভব তেমনি সমাজবিজ্ঞানের মানব রচিত বিজ্ঞান যা এর সাথে যুক্ত । ভূগোল বিজ্ঞান না কলা তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে।