নারীদের জন্য আবশ্যকীয় কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। নারীরা পরিবারের সবচেয়ে সক্রিয় ব্যক্তি। কারণ একমাত্র নারীরাই পরিবারের সবার প্রতি যত্নশীল হয়ে থাকে। সবার প্রয়োজন মেটানোই যেন তার কাজ। কাকে কখন ডাক্তার দেখাতে হবে, কে কোন খাবার খাবে এমনকি পরিবারের সদস্যদের দেখা শোনার পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়।পরিবারের সকলের প্রতি দায়িত্বশীল হলেও নারী নিজের বেলায় খুবই উদাসীন।এজন্যই নারী অনেক সময় জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কারণ নারীর রোগ শনাক্ত করা হয় জটিল আকার ধারণ করার পর। এমনকি টাকা খরচের ভয়ে পরিক্ষা – নিরীক্ষা না করাই নারীর স্বভাব। নারী নিজের প্রতি একটু যত্নশীল ও সচেতন হলেই এসব জটিল রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারে।কোন রোগ বালাই,সমস্যা বা উপসর্গ না থাকলেও বিশেষ বয়সে নারীদের কিছু রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করা উচিত। একে বলা হয় স্ক্রিনিং। হাভার্ড মেডিকেল স্কুল নারীদের জন্য আবশ্যকীয় কিছু স্ক্রিনিং এর তালিকা প্রকাশ করেছে।
রক্তচাপঃ পুরুষদের মত যে কোন নারীর চল্লিশ পেরোলেই প্রতি বছর অন্তত একবার রক্তচাপ মাপতে হবে। করতে হবে রক্তের শর্করা ও চর্বি নির্ণয়। রুটিন ব্লাড কাউন্ট থেকে একজন চিকিৎসক নারী স্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক তথ্য পাবে।কিডনিঃকিডনির অবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে সেরাম ক্রিয়েটিনিন। বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে তাদের কিডনি পরীক্ষা করা জরুরি। সাধারণত অভ্যাসগত ভাবেই নারীদের মধ্যে পর্যাপ্ত পানি পান করতে দেখা যায় না যার ফলে তারা কিডনি সমস্যায় ভোগেন।চোখঃবয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। দৃষ্টি ঝাপসা এবং চোখ শুষ্ক হতে আরম্ভ করে। ছানি বা গ্লুকোমা ক্রমে দেখা দিতে পারে। তাই চল্লিশ পেরোলেই নিয়মিত চোখের পরীক্ষা জরুরী। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের চোখে ব্যাপারে অতিরিক্ত সচেতন হতে হবে।প্যাপস্মেয়ারঃ২১বছর পর থেকে প্রতি ৩ বছর অন্তর অন্তর প্রত্যেক মেয়েকে জরায়ুমুখের প্যাপ স্মেয়ার পরীক্ষা করানো উচিত। নারীদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে, এর অন্যতম কারণ হলো সার্ভিক্যাল ক্যান্সার। আর সার্ভিক্যাল ক্যান্সার রোধেই করা হয় প্যাপ স্মেয়ার পরিক্ষা টি।
ম্যামোগ্রামঃ দেশে স্তন ক্যান্সারে আ’ক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রত্যেক মেয়ের উচিত প্রতিমাসে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা। কোন অস’ঙ্গতি পাওয়া গেলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ৪০ পেরোনোর পর মহিলাদের স্তন ক্যান্সার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থেকে থাকে তবে এই পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরী।হৃদরোগঃনিয়মিত হৃদযন্ত্রের পরিক্ষা ও হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ রাখা চল্লিশোর্ধ সকল নারীর প্রয়োজন। নিয়মিত চেকআপে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে আক’স্মিক মৃ’ত্যু প্রতিরোধ করা যায়। হাড়ের ঘনত্ব ও ভিটামিন ডিঃ নারীদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয়ও বাড়তে থাকে। ৪০ পাড় হলেই হাড়ের ঘনত্ব পরিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড়ের ক্ষয় ও অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।তাই চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের ভিটামিন ডি বেশি প্রয়োজন।ডায়াবেটিসঃ চল্লিশোর্ধ মহিলারা টাইপ টু ডায়াবেটিসের বেশি আক্রান্ত হন।শরীরে গ্লুকোজের সমত্ব বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না, তাই ডায়াবেটিস রুখতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা, খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম জরুরী।
ওভারিয়ান ক্যান্সারঃ মেনোপজের পর থেকেই মহিলাদের ওভারিয়ান ক্যান্সার দেখা দেয়। তাই এই ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে ঋতুজরার আগেই নির্দিষ্ট পরীক্ষা করা উচিত।থাইরয়েডঃ মহিলাদের একটি জটিল সমস্যা হচ্ছে থাইরয়েড। কিছু কিছু মহিলা হাইপোথ্যারয়ডিজমে ভোগেন,আবার কিছু কিছু মহিলা হাইপার থ্যারয়ডিজমে। পা ফোলা, হাত পা ও জয়েন্ট গুলোতে ব্যথা সাধারণ উপসর্গ।অতিরিক্ত ওজন থাকলেও থাইরয়েড পরীক্ষা করা উচিত।নারীদের এসব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য সচেতনতা প্রয়োজন। সেই সাথে ঘরের পুরুষ সদস্যটির ও নারীর প্রতি নজর দেয়া জরুরি, যাতে করে সবাইকে যত্নে রাখা মানুষটি যেন কোনো বড় সমস্যায় না পড়ে। নারীর প্রতি সামান্য সচেতনতাই পারে তাকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে।