শিশুদের জ্বর ও খিঁচুনি উঠলে যা করা জরুরি আর যা করা যাবে না এই নিয়ে জ্ঞাত থাকা খুব জরুরি যাদের বাসায় বিশেষ করে ছোট শিশু আছে । ছোট্ট শিশুদের প্রায় জ্বর উঠলে খিঁচুনি শুরু হয়। সাধারণত ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর এরকম জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হতে পারে। জ্বর বাড়ার সাথে সাথে খিঁচুনির ঝুঁকি ও বাড়ে। কয়েক মিনিটের জন্য খিচুনি স্থায়ী হয়।তবে সচারাচর ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে থেমে যায়।খিচুনির ১-২ ঘন্টার পরে জ্ঞান ফিরে আসে।
নানা রকম সংক্রমণ যেমন হাম,কান পাকা,টনসিলের প্রদাহ,শ্বাসতন্ত্র বা আন্ত্রিক রোগের জ্বরের সংঙ্গে খিচুনি হতে পারে। কিছু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে জ্বর ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর কাছাকাছি হলে খিচুনি শুরু হয়।একে ফেব্রাইল কনভালশন বা খিচুনি জ্বর বলে। যেসব শিশুদের ফেব্রাইল কনভালসন তথা জ্বর জনিত খিঁচুনি হওয়ার ইতিহাস আছে তাদের ক্ষেত্রে জ্বর না হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। শিশুদের সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ইনফেকশনের ঝুঁকি মুক্ত রাখতে হবে।
এরপর যদি জ্বর আসে তবে শুরুতেই প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ানো শুরু করতে হবে, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করতে হবে।এসব রোগীর ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সিরাপের মাত্রা চিকিৎসক আগেই নির্ধারণ করে দেন।প্যারাসিটামল খাওয়ানোর পাশাপাশি তাকে তার শরীরের ওজনের ভিত্তিতে ডায়াজিপাম গ্রুপের ওষুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া জ্বর কমাতে পরিষ্কার ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। তাপমাত্রা ১০১ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে ১২৫ মিলিগ্রামের সাপোজিটরি দিতে হবে।যদি দুই দিনের মধ্যে জ্বর কোন প্রকার উন্নতি না হয়, তবে দ্রুত শিশুকে কোন শিশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
খিচুনি জ্বরের লক্ষণসমূহ ১) খিচুনি জ্বর হলে শিশুর পেট ধনুকের মতো বেঁকে যায়।২) হাত-পায়ে ঝাঁকুনি দেয় বা কাপে। চোখে পলক ফেলে না তবে উপরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।৩) মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়, প্রস্রাব পায়খানা করে দেয়। দাঁত দিয়ে জ্বিহবা কামড় দিয়ে কেটে রক্ত বের করে ফেলে।৪) খিচুনি শেষ হওয়ার পরও কিছু সময় কাউকে চিনতে পারেনা।
খিঁচুনি হলে কি করা উচিতঃ শিশুর যদি খিঁচুনি হয় তবে ঘাবড়ে যাবেন না, শান্ত থাকতে হবে। শিশু কে একপাশে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে যেন জিভ দিয়ে শ্বাসনালীতে বাধা না দেয়।বাচ্চাকে নিরাপদ স্থানে রাখুন যাতে কোথাও পড়ে না যায় ও ব্যথা না পায়।বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল রাখুন এবং খিচুনির স্থায়িত্ব খেয়াল রাখুন। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল সাপোজিটরি দিতে পারেন এবং মৃদু গরম পানি দিয়ে গা মুছে দিতে পারেন। তবে খিচুনি যদি বারবার হতে থাকে বা পাঁচ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় তবে হাসপাতালে নিতে হবে।আর শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখাটা জরুরি।
খিচুনি সময় যা করা যাবে না ১। খিচুনির সময় বাচ্চার দুই দাঁতের পাটির মাঝখানে জোর করে কোন কিছু ঢোকানো যাবে না।২। বাচ্চার কাপুনি বন্ধ করার চেষ্টা করা যাবে না, অযথা চাপাচাপি করা যাবে না।৩। খিচুনির সময় বাচ্চার মুখে কোন খাবার বা ওষুধ দেওয়া যাবে না। কারণ কোন শিশুর প্রথম বার কখন খিচুনি হবে, তা আগে থেকে কোন ভাবেই বলা সম্ভব না।কাজেই প্রথম বার খিচুনি দেখা মাত্রই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসক আসল কারণ যাচাই করবেন। যেসব শিশুর এক বছর বয়সের আগে খিঁচুনি শুরু হয় তারা খুবই ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া তাদের মা-বাবার যদি খিচুনির সমস্যা থাকে, এ ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
প্রতিটি খিঁচুনিই বিপদজনক এবং মস্তিষ্কের কিছু না কিছু ক্ষতি করে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় খিচুনি আসার সুযোগ না দিলে। আর খিচুনি শুরু হয়ে গেলে তা দ্রুতই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে এটি পরবর্তীতে মৃগীরোগ বা এপিলেপ্সি হিসেবে সারা জীবনের জন্য থেকে যেতে পারে।সুতরাং শিশুর জ্বরের সাথে খিচুনি থাকলে তাকে সাধারন ব্যাপার ভেবে মোটেও সময় নষ্ট করা উচিত না।দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।