শরীরের সুস্থতা ও তারুণ্য ধরে রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জুরি মেলা ভার।অ্যান্টিঅক্সিডেন্টকে বাংলায় বলা হয় জারণরোধক।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একটি অণু যা অন্যান্য অণুর জারণ ক্রিয়ায় বাধা দেয়।এখন প্রশ্ন হচ্ছে জারণ কি?জারণ হচ্ছে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া যা মুক্ত র্যাডিকেল উৎপাদন করে এবং শিকল বিক্রিয়ার মাধ্যমে দেহকোষের ক্ষতি করে।আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে বিদ্যমান থাকা থায়ল বা অ্যাসকরবিক(ভিটামিন -সি) এই শিকল বিক্রিয়াগুলোকে নষ্ট করে দেয়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অন্তর্ভুক্ত খাদ্য ভিত্তিক কিছু পদার্থ রয়েছে যেমন; বিটা ক্যারোটিন,লাইকপেন এবং ভিটামিন সি।অনেকেই আছে যারা অতি দ্রুত বুড়িয়ে যায়।আর এই বুড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপার টা বয়সের তুলনায় খুব দ্রুত ঘটতে থাকে।বুড়িয়ে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে অক্সিডেটিভ চাপ।
দেহের বিপাক প্রক্রিয়া,পরিবেশ দূষণ, কালো ধোঁয়া,ইউভি রশ্মি,রঞ্জন রশ্মি,অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়া এসবের ফলে ফ্রি র্যাডিকেল সৃষ্টি হয়। ফ্রি র্যাডিকাল একটি অনু যেখানে একটি অতিরিক্ত বিজোড় ইলেকট্রন থাকে, ফলে এটি জোড় বন্ধনের জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। মূলত এই উদ্দেশ্যেই এটি শরীরের কোষের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে।ফ্রি র্যাডিকেলের জন্যই চামড়ায় অকাল বার্ধক্যের চিহ্ন, বলিরেখা, চুলের ক্ষতি, বয়সের আগেই চুল পেকে যাওয়া এবং ঝরে যাওয়ার মত সমস্যাগুলি দেখা দেয়। শুধু তাই নয় ফ্রি র্যাডিকেল এর কারনে আর্থ্রাইটিস,লুপাস এরিথেম্যাটসাস,উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, গ্যাস্ট্রিক আলসার, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।আর এই ফ্রি র্যাডিকেল গুলোকে নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।যৌবন ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বিকল্প নেই। কিছু কিছু চিকিৎসক যৌবন ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধরনের ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রাকৃতিক ভাবেই আমরা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেতে পারি।কিছু কিছু খাদ্য আছে যেগুলোতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে।
মধু, মধুতে প্রাকৃতিক ভাবেই রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান।তাই সেই প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ঔষধ বানানোর কাজে মধু ব্যাবহার করা হয়। মাছ, কিছু কিছু মাছ আছে যেগুলোতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। শুধু তাই নয় মাছের মধ্যে স্যালেনিয়ামও রয়েছে।যা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। মাছের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেল তৈরি হওয়াকে বাধা দেয়।
লাল চাল, লাল চাল কম ক্যালরি সমৃদ্ধ একটি খাবার।এর মধ্যে বিদ্যমান থাকা পলিফেনল উপাদান অক্সিডেশন বা জারণ প্রক্রিয়া রোধ করে। লাল চালের মাধ্যমে দেহের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ সম্ভব। লাল চালে বিদ্যমান থাকা ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ফসফরাস ও প্রয়োজনীয় ফাইবার দেহের কোলন পরিষ্কার করে।তাই খাদ্যতালিকায় লাল চাল রাখা যেতে পারে।খেজুর, খেজুরে ফাইটোকেমিক্যাল এবং অ্যানথোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। শুধু তাই নয় এতে আরও আছে বিটা ক্যারোটিন,ভিটামিন সি, নিওক্লোরোজেনিক এসিড এবং ক্লোরোজেনিক এসিড। এই সমস্ত উপাদানগুলো রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।শরীরকে সুস্থ রাখতে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওষুধ ব্যবহার করা হয় তাতে প্বার্শপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। অতিরিক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের অক্সিডেটিভ প্রক্রিয়া না কমিয়ে কোষের শক্তি উৎপাদনে বাধা দেয়।যার ফলস্বরূপ কোষের মৃত্যু হয়। তাছাড়া কোনো কিছুই বেশি পরিমাণ ভালো না।ঠিক তেমনি অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি হলে তা শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কে ঔষধ হিসেবে না নিয়ে খাবারের মাধ্যমে এর ঘাটতি পূরণ করাই শ্রেয়। এতে যেমন আপনি সুস্থ থাকবেন তেমনি থাকবেন যৌবনদীপ্ত।