করোনাকালে মুখ ও দাঁতের যত্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।যা আমাদের সকলের খুব আগ্রহ সহকারে জানা দরকার।করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তার ও প্রসাশন।কেউ কেউ চিকিৎসা পাচ্ছে আবার কেউ পাচ্ছেই না।এমন অবস্থায় একজন সুস্থ মানুষ তার স্বাভাবিক সমস্যার (দাঁতে ব্যাথা,বদহজম,শারীরিক অন্যান্য সমস্যা) জন্য বাহিরে চিকিৎসা না ও পেতে পারে।আর তাই ঘরে থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে জেনে নিজের শরীর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখা সম্ভব।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে,করোনা ভাইরাস ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম হলো মুখ।মুখের মাধ্যমে জীবাণুরা শরীরে গিয়ে বিভিন্ন রোগ ও ভাইরাসের সৃষ্টি করে।পরবর্তীতে যা আমাদের মৃ’ত্যুর মতো ভয়া’নক পরিস্থিতিতে নিয়ে আসে।আর তাই ঘরে নিরাপদে থেকে এবং নিজের শরীর স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখার জন্য মুখ ও দাঁতের যত্ন নেওয়া অপরিহার্য।মুখ ও দাঁতের সুস্থতার উপর দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থতাও অনেকাংশে নির্ভরশীল।তাই সবার আগে মুখ ও দাঁতের সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের যত্ন নেওয়ার ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যম বা পন্থা আছে।
যা প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহার করা হচ্ছে।তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক,কবে এবং কোথা থেকে শরীরসহ দাঁত ও মুখের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে।খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০ অব্দে,সিন্ধু সভ্যতার প্রথম দিকে দাঁত ড্রিল করার প্রমাণ মেলে।এর অনেক পরে ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মানুষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে । এজন্য ১৮৪০ সালে জন এম হ্যারিস ওহাইওয়ের বেনব্রিজে বিশ্বের প্রথম ডেন্টাল স্কুল স্থাপন করেন।যা বর্তমানে ডেন্টাল জাদুঘর হিসেবে পরিচিত।
২০ শতকে ইউরোপ ও আমেরিকায় স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য গবেষণা কেন্দ্র খোলা হয়েছিল।২০ শতকের মাঝামাঝিতে রসায়ন, জেনেটিক এবং রেডিওগ্রাফিকের বিকাশের পাশাপাশি দন্তচিকিৎসা ও ব্যাপক ভাবে প্রসার লাভ করে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি দেখে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশেও একটি আইন প্রনয়ণ করা হয়েছিল।আর সেই আইনের ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশে মেডিকেল ও ডেন্টাল গ্রাজুয়েটরদের চিকিৎসা এবং ডেন্টিস্ট্রি অনুশীলনের জন্য নিবন্ধন দেওয়া হয়।মূলত তখন থেকেই বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হয়।তাই জেনে নেওয়া যাক করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে মুখ ও দাঁতের যত্ন নেওয়া যেতে পারে।
১.মুখ ও দাঁতের যত্নে সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা গঠন করতে হবে।ছয় মাসে একবার হলেও ডেন্টালে যেয়ে দাঁতের পরীক্ষা করাতে হবে।২.বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করে থাকে।তাই মুখ সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আমরা দাঁত নিয়মিত ব্রাশ করলেও জিব পরিস্কার করি না।এতে ধীরে ধীরে জিবের ছিদ্রে ‘volatile surfer compounds’ নামে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে যা মুখের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী।এজন্য নিয়মিত দাঁত ব্রাশের সঙ্গে জিবের যত্ন নিতে হবে।৩.অনেকর দাঁত ব্রাশের সময় বা অকারণেই দাঁত দিয়ে র’ক্ত বের হয়।এটাকে ডেন্টাল প্লাক বলা হয়।এটা স্কেলিং দ্বারা সারানো যেতে পারে।তবে যাদের র’ক্তে প্লাটিলেট কমে যায় বা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিকস রোগে আক্রান্ত থাকে তাদের দাঁতে এই সমস্যাটি হয়।এই সমস্যা দূর করতে বাহিরের ভেজালযুক্ত পণ্য ব্যবহার না করে বাসায় তৈরি হালকা গরম পানির সাথে অল্প পরিমাণে লবণ মিশিয়ে গারগেল/কুলি করলে ব্যাকটেরিয়া কমে র’ক্ত পড়ার সমস্যা দূর করা যেতে পারে। ৪.অনেকের মুখে ঘা বা গোটা উঠে।এই সমস্যা রোধে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।সবুজ শাকসবজি,ভিটামিন সি,বি কমপ্লেক্স,প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।সব রকমের জাঙ্কফুড পরিহার করতে হবে। চিনি খাওয়া বর্জন করতে হবে।
৫.তামাক বা নেসা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না।কারণ তামাক ফুসফুসের ক্ষতি করে যা করোনা ভাইরাসের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে চাইলে পান,সুপারি,জর্দা,নিকোটিন জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না।এজন্য বছরে দু’বার ডেন্টালে যেয়ে দাঁত ও মুখের চিকিৎসা নিতে হবে। দাঁত মুখ সুস্থ থাকলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সুস্থতাও কামনা করা যাবে।