র’ক্তের হিমোগ্লোবিন কী এবং এর কাজ কী তা আমাদের সকলের জানা উচিত সুস্থ থাকার জন্য। হিমোগ্লোবিন মানুষের র’ক্তে উপস্থিত একটি বিশেষ কণিকা যা আপাতদৃষ্টিতে মানুষের সচেতনতার মধ্যে পড়ে না।কিন্তু এর অভাবে মানুষের অনেক রকম ক্ষতি হয়।এমনকি এর পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকলে মানুষের কিছু অঙ্গ, বি’কলাঙ্গ ও হয়ে যেতে পারে। মানুষসহ মেরুদন্ডী ও অমেরুদণ্ডী সকল প্রাণির রক্তেই হিমোগ্লোবিন আছে যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সহ অন্যান্য কার্যাবলী সম্পন্ন করে থাকে।
হিমোগ্লোবিন কীঃ র’ক্তকোষে লৌহসমৃদ্ধ একধরনের প্রোটিন কে বলা হয় হিমোগ্লোবিন। সমগ্র দেহে অক্সিজেন ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রক্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে থাকে। র’ক্তের তিনটি কণিকা রয়েছে। তাদের মধ্যে লোহিত কণিকায় এক বিশেষ ধরণের আয়রন আছে যাকে বলা হয় হিমোগ্লোবিন।ধমনী থেকে দেহের সব যায়গায় অক্সিজেন সরবরাহ করা এই হিমোগ্লোবিন এর প্রধান কাজ। মেডিকেল সায়েন্স এর ভাষায় একে মেটালোপ্রোটিনও বলা হয়ে থাকে। এই হিমোগ্লোবিন আমাদের র’ক্তের লোহিত কণিকায় থাকে এবং র’ক্তের মাঝে প্রয়োজনীয় ঘনত্ব বজায় রাখে। মূলত এই হিমোগ্লোবিন এর জন্যই র’ক্ত ঘন ও লাল রঙের হয়ে থাকে। মেডিকেল সায়েন্স আমাদের জানায় যে, হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরে দুই ধরনের প্রোটিন গঠনে ভূমিকা রাখে। এদের একটি হচ্ছে টারশিয়ারি অন্যটি হচ্ছে কোয়াটার্নারী।এই উভয় ধরণের প্রোটিন ই আমাদের শরীরের জন্য দরকার। হিমোগ্লোবিন রক্তের মাঝে আলফা হেলিক্স নামের এক ধরণের আ্যমিনো আ্যসিড উৎপন্ন করে, এসব প্রোটিন এর স্থায়িত্ব প্রদান করার জন্য।
র’ক্তে হিমোগ্লোবিন এর কাজঃ আমাদের জানা আছে যে, হিমোগ্লোবিন বর্ণহীন রক্তকে লাল করে। এবং সে র’ক্তে থাকা নানান রকম উপাদানের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করে থাকে হিমোগ্লোবিন। কিন্তু এই হিমোগ্লোবিন এর মূল কাজ হচ্ছে মানব শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা।মানুষের দেহের প্রতিটি অঙ্গে প্রত্যঙ্গে দরকারি অক্সিজেন পৌঁছে দেয় এ হিমোগ্লোবিন। সেই সাথে র’ক্তে থাকা নানা ধরনের উপাদানের পর্যাপ্ততাও নিশ্চিত করে এই হিমোগ্লোবিন। র’ক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো, অক্সিজেন স্বল্পতা।
বাতাস থেকে আমরা যখন অক্সিজেন গ্রহণ করি, নিঃশ্বাসের সাথে এটি প্রথমে আমাদের ফুসফুসে যায়।ফুসফুস থেকে এই অক্সিজেন মানব শরীরে অবস্থিত প্রত্যেকটি টিস্যুতে, প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পরিবহন করে। আর এই দায়িত্ব টি পালন করে থাকে হিমোগ্লোবিন। কেবল এটিই নয়, অক্সিজেনের সাথে কার্বন – ডাই অক্সাইডের বিনিময় করে এই হিমোগ্লোবিন।সুতরাং, ফুসফুস থেকে অক্সিজেন ধারণ করে শরীরে পাঠায় আবার শরীর থেকে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড নিয়ে পাঠিয়ে দেয় ফুসফুসে। অর্থাৎ, আমরা বুঝতে পারছি যে আমাদের শরীরের র’ক্তের হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন সরবরাহের সাথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আর এই কারণেই র’ক্তে লোহিত কণিকা কমে গেলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হতে হয়। আমরা তখন আ্যনিমিয়া সহ নানারকম শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হই।র’ক্তে যেকোন ধরণের ক্ষতিকর পদার্থের মিশ্রণে বাধা প্রদান করে থাক্র হিমোগ্লোবিন। র’ক্তে কোনও দূষিত পদার্থ দেখা দিলে হিমোগ্লোবিন সেটাকে পরিষ্কার করে দেয়।আমাদের শরীরে যত বিষাক্ত গ্যাস জমা হয়, সেগুলে শরীরের বাওরে পরিবহণেও সাহায্য করে হিমোগ্লোবিন। মানব শরীরের র’ক্ত কণিকার ৯৬-৯৭ ভাগই হয় হিমোগ্লোবিনের প্রোটিন অংশ। আর হিমোগ্লোবিন র’ক্তের মোট ওজনের তথা পানি সহ মোট ওজনের ৩৫ ভাগই দখল করে থাকে।বাতাস থেকে প্রতিবার ১.৩৬ মিলিলিটার, কখনো কখনো তার চেয়ে বেশি পরিমাণ গ্রহণ করতে পারে আমাদের শরীরে থাকা প্রতি ১ গ্রাম হিমোগ্লোবিন।
যারফলে র’ক্তে এর পরিবহণের মাত্রা প্রায় ৭০ গুন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। শরীরে সরবরাহ হয়ে থাকে অক্সিজেন। মানব শরীরের ৯৭ ভাগ অক্সিজেন ফুসফুস থেকে হিমোগ্লোবিন এর মাধ্যমে শরীরের নানা অংশে সরবরাহ হয়। বাকি ৩ ভাগ মিশে যায় র’ক্তের প্লাজমার মাধ্যমে।হিমোগ্লোবিন র’ক্তের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ ভাগ ও সর্বোচ্চ ১০০ বার পর্যন্ত অক্সিজেন মুভ করতে পারে।ফুসফুসের যে স্থানে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা যথার্থ থাকে, সেখানে অক্সিজেন লেভেল অত্যন্ত বেশি থাকে।সঠিকভাবে সেটি সকল স্থানে সমতা বজায় রাখে। ফলে যে স্থানে অক্সিজেন বেশি সেখান থেকে কম স্থানের যায়গায় অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে এই হিমোগ্লোবিন। র’ক্তে যেন হিমোগ্লোবিন কমে না যায়,সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।যেসব খাদ্য খেলে র’ক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে সেসব খাবার, যেমন মাংশ, ফলমূল (কমলা,লেবু,স্ট্রবেরি, আপেল,ডালিম), শাকসবজি, ব্রোকলি, বিটরূট, আলু, সামুদ্রিক খাবার, শাপলা ও শস্য, কলাই জাতীয় ডাল,ঝিনুক, শস্যদানা, শুকনো ফল প্রভৃতি পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।