মানুষের জীবনে এমন একটি পর্যায় আসে যখন তার বুদ্ধি,স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব লোপ পাওয়া শুরু করে।তখন অনেক কিছুই মনে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে।তবে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিক্ষয় প্রাপ্তবয়সেই হতে পারে।এর ওপর বার্ধক্য বা বয়স কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।ইউনির্ভাসিটি কলেজ লন্ডনের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড.নাতালি মার্চান্ট বলেন,কেউ যদি দীর্ঘদিন যাবৎ নেতিবাচক চিন্তা করেন তাহলে তার মধ্যে এই রোগ বিস্তার লাভ করে থাকে।তিনি আরো বলেন,যারা ডিমেনশিয়ায় আক্রা’ন্ত হন তাদের অবধারণগত ঘাটতি তৈরি হয়।এর সাথে তাদের মস্তিষ্ক থেকে ‘টাউ’ ও ‘বেটা অ্যামিলয়েড’ নামক ক্ষতিকর দু’টি প্রোটিন নিঃসরণ হয়।
অনেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা ডিমেনশিয়ার জন্য এইডস,দীর্ঘমেয়াদি ধুমপান,মদ্যপান,আলঝেইমার,ভিটামিন-সি এর অভাব,বিভিন্ন মস্তিষ্কের রোগকে দায়ী করে থাকেন।তাছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্ক থেকে নির্দিষ্ট কোষের সংখ্যা কমতে থাকে।এতে করে দেহে বিভিন্ন রোগ ব্যাধির সংক্র’মণ ঘটে।ডিমেনশিয়ায় আক্রা’ন্তের জন্য এসব কারণকেই বেশি প্রধান্য দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।ড.মার্চান্ট এই রোগ সম্পর্কে আরো জানান,প্রকৃতিগত ভাবেই অনেক মানুষ নেতিবাচক চিন্তা করে।তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও নেতিবাচক হয়ে থাকে।তারা যাই ভাবুক না কেন সেগুলো কখনো ইতিবাচক হয় না।
যেমন:একটি গ্লাস পানি দিয়ে অর্ধেক পূর্ণ করে রাখা হলে;এই অবস্থায় কাউকে প্রশ্ন করলে দুই ধরনের উত্তর পাওয়া যাবে।কেউ বলবে গ্লাসটি অর্ধেক পূর্ণ আর কেউ বলবে গ্লাসটি অর্ধেক ফাঁকা।এখানে দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষরা হবে নেতিবাচক চিন্তাধারার।তারা সবকিছু নেতিবাচকভাবে দেখতে অভ্যস্ত।এই স্বভাবের মানুষের জীবনে পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার পাশাপাশি জটিলতর বিপদও হানা দিতে পারে।উল্লেখিত বিষয়টিতে আমরা ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিক্ষয় রোগের সাথে পরিচিত হয়েছি।তবে কেউ যদি এ রোগে আক্রা’ন্ত হন বা কারো মধ্যে যদি এর লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে কী করতে হবে?
ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়া রোগ মানসিক অবসাদগ্রস্থ একটি সমস্যা।এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে কিছু কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হবে।নিম্নে এই রোগের বিস্তার কমানোর জন্য করণীয় বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো।ডিমেনশিয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে প্রতিদিন রুটিনমাফিক কাজ করা যাবে না।কাজের নিয়মে কিছুটা ভিন্নতা আনতে হবে।যেমন:প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দাঁত ব্রাশ করা,নাস্তা করা,ঘর গুছানো,গোসল করা।এসব কাজ প্রতিদিন এক সময়ে একটার পর একটা না করে এলোমেলো করে করতে হবে।এতে আপনার মস্তিষ্ক সচল থাকবে এবং যে কাজটি করেননি,সে কাজটি করার কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে শরীর ও মন দু’টাই খরাপ লাগে।তাই প্রতিদিন নিয়ম করে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।তাহলে আপনার মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকবে।আপনি যেকোনো কাজ খুব দ্রুত ও আনন্দের সাথে করতে পারবেন।মানসিক অশান্তিও কমবে।পারিবারিক বা বন্ধুমহলে যদি কোনো বিষয়ের আলোচনা হয় তাহলে সে আলোচনায় অংশ নিতে হবে।নিজের মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধারণা বের করে আলোচনায় সাহায্য করতে হবে।এতে আপনার মস্তিষ্কের চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
নিয়মিত শারীরিক চেকআপে আপনার শরীরে কোনো সমস্যা থাকলে তা বের হয়ে আসবে।র’ক্তচাপ ও ডায়বেটিকসের পরিমাণ বাড়লে বা কমলে তা বোঝা যাবে।এতে আপনার মানসিক চাপ হ্রাস পাবো।উপরিউক্ত কাজগুলো নিয়মিত করলে একজন মানুষের শরীর ও মন দু’টাই ভালো থাকবে।অবসাদ থেকে দূরে থাকবে।মানসিক চাপ কমবে।ডিমেনশিয়া নামক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।