করোনাভাইরাস প্রতিরোধে হোমিও ওষুধ কতটুকু কার্যকরী তা জেনে নিন।কারণ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস একটি আতঙ্কে’র নাম।যা বিশ্বের প্রায় ৪ লাখ ৮ হাজার ৬০৮ জন মানুষের মৃ’ত্যুর কারণ।তাই এই ভাইরাসকে মহা’মারীও বলা হয়।২০২০ সালের প্রথম থেকেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়।তখন থেকে ধীরে ধীরে এর প্র’কোপ বেড়েই চলছে।অনেক ওষুধ কোম্পানি ও বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসকে প্রতিহত করার জন্য ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দেশ এর ওষুধ তৈরিতে সফল হতে পারেনি।
তবে গত মাসে একটি হোমিওপ্যাথি ওষুধ ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০’ নিয়ে শুরু হয় বির্তক।অনেকে মনে করেন,এই ওষুধে আছে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ক্ষমতা।ভারতের সেন্ট্রাল ড্রাগ অর্গানাইজেশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি চিকিৎসক এই ওষুধ নিয়ে বির্তকে জড়ান।আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ ওষুধটিকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধক হিসেবে বেশ কিছু রাজ্যে সুপারিশ করা হয়েছে।এর আগে আয়ুষ মন্ত্রণালয় করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধক হিসেবে যেসব প্রতিষেধকের তালিকা তৈরি করেন,সেখানে এই ওষুধের নাম ছিল।আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ নিয়ে বির্তকের মূল কারণ হলো এই ওষুধটি যে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করবে এর কোনো তথ্য প্রমান এখনো কোথাও পাওয়া যায়নি।এমনকি হোমিও চিকিৎসকরাও তেমনটাই বলছেন।কিন্তু ভারতের বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে এই ওষুধটিকে করোনা প্রতিরোধের জন্য সেবন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।তারা ভাবছে ওষুধটিতে করোনা প্রতিহত করার ক্ষমতা রয়েছে।সেজন্য সবাই ওষুধটি সেবন করছে।
আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ ওষুধটিকে রাজস্থান,কর্নাটক,তামিলনাড়ু,অন্ধ্রপ্রদেশ ও কেরালার সরকার সেবনে সুপারিশ করেছে।মহারাষ্ট্রের সরকার এখনো ঘোষণা না দিলে ও মুম্বাইয়ের পুর কর্তৃপক্ষ দু’টি ওয়ার্ডের অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এই ওষুধ বিতরণ করেছে।এমনকি মুম্বাইয়ের যেসব এলাকায় এই ওষুধ ব্যবহারের কোনো প্রটোকল নেই,সেখানেও মানুষ এই ওষুধ ক্রয় করে সেবন করছে।এতো চাহিদা দেখে বিক্রেতারা ওষুধটি দুই থেকে তিন গুন বেশি দামে বিক্রি করছে।আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ টি ডিসটিলড ওয়াটারের সাথে আর্সেনিক মিশিয়ে গরম করে তৈরি করা হয়।এই প্রক্রিয়ায় তিনদিনে ওষুধটি তৈরি করা হয়।তবে আর্সেনিক ত্বকের ক্যান্সার,ফুসফুস ও হৃদরোগ রোগের জন্য দায়ী।কিন্তু মুম্বাইয়ের প্রডিকটিভ হোমিও ক্লিনিকের চিকিৎসক অমবীশ বিজয়কর জানিয়েছেন,এই ওষুধে ১ শতাংশেরও কম আর্সেনিক আছে।তিনি আরো বলেন,আর্সেনিকাম অ্যালবাম শারীরিক প্রদাহের জন্য ব্যবহার করা হয়।ডায়াবেটিকস ও সর্দি-কাশির জন্যও ব্যবহার করা হয় ওষুধটি।
তবে আইসিএমআর এর ডিরেক্টর উত্তম বলরাম ভাগব বলেছেন,আমরা এই ওষুধটি ব্যবহারের কোনো গাইডলাইন দেয়নি।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও তেমন কোনো গাইডলাইন দেয়নি।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখ্য বিজ্ঞানী ডক্টর সৌম স্বামীনাথন বলেছেন,এ ওষুধ করোনা প্রতিরোধে কাজ করে বলে কোনো প্রমান এখনো আমরা পাইনি।মহারাষ্ট্র সরকার আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ এর কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেন।তারা বলেন,আমরা এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।মহারাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য বিভাগের জয়েন্ট ডিরেক্টর ডক্টর অর্চনা পাটেল জানান,এই ওষুধটি আমরা ভিটামিন-সি এর মতো ইমিউনিটি হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেব,প্রতিষেধক হিসেবে নয়।হোমিও চিকিৎসক বাহুবলী শাহ বলেন,আয়ুষ মন্ত্রণালয়ে এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ও শ্বাসজনিত প্রদাহের জন্য ব্যবহার করা হয়।তবে সকলের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক নয়।তাই সবার জন্য শরীরে এক প্রতিষেধক কাজ না ও করতে পারে।তিনি আরো জানান,এই ওষুধটি যদি আদৌ ব্যবহার করা হয় তবে তা চিকিৎসার একটি অংশ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।পূর্ণ চিকিৎসার জন্য নয়।