ঘন ঘন গর্ভপাত কেনো হয়,প্রসূতি মায়েদের যা জানা প্রয়োজন।অনেক মেয়ের ঘন ঘন গর্ভপাত বা বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়।বার বার বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়াটা কারোরই কাম্য নয়।বার বার গর্ভপাতের ফলে পরিবারের ওপর যেমন এর প্রভাব পড়ে আবার একটি মেয়ের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ে।গর্ভধারণের পর ২৮ সপ্তাহের মধ্যে যদি গর্ভের শিশুটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঝরে পড়ে বা নষ্ট হয়ে যায় তখন তাকে বলা হয় গর্ভপাত।আর যদি দুয়ের অধিক গর্ভপাত হয় তখন তাকে রেকারেন্ট অ্যাবরশন বা ঘন ঘন গর্ভপাত বলে।গর্ভপাত হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকে।কারণ গুলো জানা থাকলে প্রসূতি মায়েদের অনেক রকমের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যাবে।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম ,মেয়েদের শরীরে হরমোনার ইমব্যালান্স অর্থ্যাৎ হরমোনের ভারসাম্যে যদি তারতম্য দেখা দেয় তাহলে জরায়ুতে এক ধরনের সিস্ট দেখা দেয়।আর মেয়েদের জরায়ুতে সিস্ট তৈরি হওয়াকে বলা হয় পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজঅর্ডার।পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম এর ফলে মেয়েদের শরীরে ফিমেল হরমোনের ঘাটতি দেখা দেয় আর অপরদিকে অ্যান্ড্রোজেন বা মেল হরমোন এর মাত্রা পরিমাণের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়।আর এই মেল হরমোন বেড়ে গেলেই জরায়ু বা ওভারিতে সিস্ট দেখা দেয়।পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম যাদের মধ্যে আছে তাদের অন্যদের তুলনায় ঘন ঘন গর্ভপাতের ঝুঁকি তিন গুণ বেশি থাকে।গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ও অকাল প্রসাব পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম এর প্বার্শপ্রতিক্রিয়ার ফলে হয়ে থাকে।
ক্রোমোজমের অস্বাভাবিকতা,মানুষের শরীরে থাকা ২৩ জোড়া ক্রোমোজমগুলো জীবন্ত দেহের প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসের ভিতরে অবস্থিত শক্ত শক্তির ডিএনএর একটি গ্রুপ।একটি ক্রোমোজমের একটি বান্ডিলকে বলা হয় ক্যারাইটিপ।যদি এই ক্যারাইটিপের আদর্শ কাঠামো বা কার্যকারিতার মধ্যে কোন বিচ্যুতি ঘটে তখন ক্রোমোজমের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।ক্রোমোজমের অস্বাভাবিকতা ঘন ঘন গর্ভপাতের একটি বড় কারণ।৬০ শতাংশেরও বেশি গর্ভপাত হয়ে থাকে ভ্রূণের এই ক্রোমোজমের অস্বাভাবিকতার কারণে।ইনফেকশন,কিছু সংক্র’মণ ব্যাধি যেমন সিফিলিস,টোপস্নাজমোসিস এর কারণে গর্ভপাত হয়।গর্ভবতী মায়ের সংক্র’মণ ব্যাধি থাকলে তার গর্ভপাতের একটি ঝুঁকি থেকে যায়।
প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলের ত্রুটি,প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল হলো জরায়ুর দেয়াল সংলগ্ন একটি চ্যাপ্টা ও কিছুটা গোলাকৃতির অঙ্গ।আর এই অঙ্গটি মায়েদের জরায়ুর ভেতর লেগে থাকে এবং সন্তানের সাথে মায়ের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।প্লাসেন্টাল ইনসাফিশিয়েন্সির কারণে অনেক সময় গর্ভপাত হয়ে থাকে।প্লাসেন্টাল ইনসাফিশিয়েন্সি এমন একটি কন্ডিশন যখন কিনা প্লাসেন্টা গর্ভের শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে পারেনা।এমনকি গর্ভপাতও হতে পারে।এই কারণগুলো ছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে যার ফলে ঘন ঘন গর্ভপাত হয় যেমন জরায়ুতে টিউমার,মায়ের ডায়াবেটিস,থায়রয়েড,উচ্চ র’ক্তচাপ,দীর্ঘমেয়াদি কোন জটিল রোগ থাকলে গর্ভপাত হয়।শুধু তাই নয় প্রসূতি নারী যদি মদ্যপান করে,নিষিদ্ধ ঔষধ সেবন করে,অতিরিক্ত কফি পান,ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করেন এবং ভেজাল প্রসাধনী ব্যাবহার করেন। এই সমস্ত কারণ গুলোর জন্য গর্ভপাত হয়ে থাকে।আমাদের প্রসূতি মায়েরা যদি এগুলো জানেন এবং আগে থেকেই সচেতন থাকেন তাহলে ঘন ঘন গর্ভপাত এড়াতে পারেন।কারণ আমরা জানি prevention is better than cure।