করোনা ভাইরাস নিয়ে সমগ্র বিশ্বজুড়ে চলমান আত’ঙ্কের মাঝে ভাইরাল হয়েছে ভারতীয় চিকিৎসক দেবী শেঠির একটি অডিও ক্লিপ। টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদন করে তার বক্তব্য নিয়ে। এতে অত্যধিক করোনা পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেবী শেঠি বলেছেন, এ বার্তাটি শুধু ভারতের জন্য। এখানে সমস্যাটা অন্যরকমের। আমাদের দেশের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। পরীক্ষা-কিট রয়েছে দেড় লাখেরও কম। তাই এই নিয়েও আমাদের ভাবতে হবেপ্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া বিশ্বের ১৭২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। গত বুধবার আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস শরীরে আস্তানা গাড়লেও দেখা যায় যে দুই সপ্তাহ কিংবা তারও বেশি সময় পর গিয়ে সেটি প্রকাশ পায়। এমন পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস নিয়ে জরুরি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন উপমহাদেশের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি।করোনা ভাইরাসের অন্যতম একটি উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। কিন্তু জ্বর হলেই করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা না করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. দেবী শেঠি। তার মতে, অতিরিক্ত পরীক্ষা ভবিষ্যতে বিপদ বাড়াবে। কেননা চাহিদার তুলনায় করোনা পরীক্ষার কিট এখনো অপ্রতুল।
তিনি বলেন যে , যদি কারও ফ্লু বা সর্দি থাকে; তাহলে প্রথমে নিজেকে আইসোলেট রেখে লক্ষণ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এর মাঝে লক্ষন হলো প্রথম দিন শুধু ক্লান্তি আসবে, তৃতীয় দিন হালকা জ্বর অনুভব হবে, সঙ্গে কাশি ও গলায় সমস্যা , পঞ্চম দিন পর্যন্ত মাথাব্যথা থাকবে । পেটের সমস্যাও হতে পারে কিংবা বেড়ে যেতে পারে ।ষষ্ঠ বা সপ্তম দিনে শরীরে ব্যথা বাড়বে এবং মাথা যন্ত্রণা কমতে থাকবে। তবে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পেটের সমস্যা থেকে যাবে। এবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অষ্টম ও নবম দিনে সব লক্ষণই চলে যাবে। তবে সর্দির প্রভাব বাড়তে থাকে। এর অর্থ আপনার প্রতিরোধক্ষমতা বেড়েছে এবং আপনার করোনা-আশঙ্কার প্রয়োজন নেই।
করোনা-পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দেবী শেঠি বলেন, ‘এমন সময় আপনার করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। কারণ আপনার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। যদি অষ্টম বা নবম দিনে আপনার শরীর আরও খারাপ হয়, করোনা হেল্পলাইনে ফোন করে অবশ্যই পরীক্ষা করিয়ে নিন।’একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতের কাছে এ মুহূর্তে দেড় লাখ পরীক্ষা-কিট রয়েছে। সর্বোচ্চ দেড় কোটি মানুষের পরীক্ষা করা সম্ভব। তাই জ্বর হওয়ার দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনই প্রত্যেকেরই করোনা-পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। এতে আরও বড় সমস্যা হবে।’
শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভারতীয় এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমার পরামর্শ হলো- জ্বর হলেই করোনার পরীক্ষা নয়। আগে অপেক্ষা করে উপসর্গ পর্যবেক্ষণ করুন। খারাপ হলে নিজেকে পরীক্ষা করিয়ে নিন। অত্যধিক মাস্ক বিক্রির কারণে নিজের হাসপাতালেও N95 মাস্কের ঘাটতি দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনি ভয় পেয়েছেন বলেই পরীক্ষা করা উচিত নয়।
করোনা_থেকে_বাঁচতে আগামী ১ বছরের জন্য ২২টি জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন ডা. দেবী শেঠি। ১. এক বছরের জন্য বিদেশ ভ্রমণ স্থগিত।২. আগামী এক বছর বাইরের খাবার খাবেন না।৩. বিয়ে বা অন্যান্য অনুরূপ অনুষ্ঠানে যাবেন না।৪. অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ করবেন না।৫. কমপক্ষে এক বছর কোনো ভিড়ের জায়গায় যাবেন না।৬. সামাজিক দূরত্বের নিয়মাবলী সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ করুন।৭. কাশি থেকে দূরে থাকুন।৮. মুখোশটি মুখোমুখি রাখুন।৯. বর্তমান এক সপ্তাহে খুব সাবধানতা অবলম্বন করুন।১০. আপনার চারপাশে কোনো গোলমাল হতে দেবেন না।১১. এখন থেকে ৬ মাস সিনেমা হল, শপিং মল, ভিড়ের বাজারে যাবেন না। সম্ভব হলে পার্ক, পার্টি ইত্যাদিও এড়ানো উচিত।১২. প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান।১৩. নাপিতের দোকানে বা বিউটি সেলুন পার্লারে থাকাকালীন খুব যত্নশীল হন।১৪. অপ্রয়োজনীয় সভাগুলি এড়িয়ে চলুন, সর্বদা সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রাখুন।১৫. করোনার হুমকি খুব শিগগিরই শেষ হচ্ছে না।১৬. আপনি বাইরে বেরোনোর সময় বেল্ট, রিংগুলি, ঘড়ি পরবেন না। ঘড়ির দরকার নেই। আপনার মোবাইল সময় পেয়েছে।১৭. কোনো হাতের রুমাল না, স্যানিটাইজার নিন।১৮. আপনার ঘরে জুতো আনবেন না। বাইরে রেখে দিন।১৯. আপনার হাত পরিষ্কার করুন।২০. আপনি যখন মনে করেন আপনি সন্দেহজনক রোগীর কাছে এসেছেন তখন পুরো গোসল করুন।২১. লকডাউন বা লকডাউন পরবর্তী ৬ মাস থেকে ১২ মাস এই সতর্কতা অনুসরণ করুন।২২. আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে এটি ভাগাভাগি করুন।সূত্রঃ কালের কন্ঠ