কালোজিরার রয়েছে অনেক গুনাগুন । কালোজিরা একটি মাঝারি আকৃতির মৌসুমি গাছ।এর বৈজ্ঞানিক নাম, Nigella Sativa Linn. ইউনানি,কবিরাজি চিকিৎসায় এটি অতি প্রাচীন কাল থেকেই ব্যাবহৃত হয়ে আসছে।রান্নাঘরে থাকা আমাদের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে একটি হলো কালোজিরা।অনেক রকম রান্নায় এর ব্যাবহার হয়ে থাকে।অতি পরিচিত এই কালোজিরা বিভিন্ন রোগের মহাঔষধ ।কালোজিরায় আছে ১০০ টিরও বেশি উপাদান।এতে প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ,৩৮ শতাংশ শর্করা,৩৫ শতাংশ ভেষজ তেল ও চর্বি আছে। এই কালোজিরায় আরোও আছে ভিটামিন, অ্যামিনো এসিড, প্রোটিন, পটাসিয়াম,আয়রন,স্ফটিকল নাইজেলোন, স্যাপোনিন, ক্রুড ফাইবার, ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো লিনোলেনিক, উদ্বায়ী তেল, অলিক অ্যাসিড আয়রন, সোডিয়াম ও ক্যালসিয়াম।
ডায়াবেটিস, একজিমা,উচ্চ-রক্তচাপ,এলার্জি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখে কালোজিরা।যেনে নিন কালোজিরার যত উপকারিতাঃ১. বর্তমানে ডায়াবেটিস সবচেয়ে বিপজ্জনক রোগ হিসেবে চিহ্নিত।প্রতিদিন চায়ের সাথে আধা চা চামচ কালোজিরার তেল ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রনে রাখে।২.কালোজিরা তেল ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। কালোজিরার তেলের সাথে মিশিয়ে দিনে দু’বার মুখে লাগালে, ত্বকে ব্রণ ও দাগ অদৃশ্য হয়ে যাবে।
৩. কালোজিরায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা, প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করার ক্ষমতাসহ লিভারকে সুরক্ষিত করতে দারুণভাবে সহায়তা করে । রাসায়নিক পদার্থের বিষাক্ততা কমায় কালোজিরা। লিভার ও কিডনিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। ৪.সর্দি-কাশি থেকে আরাম পেতে, এক চা চামচ কালোজিরার তেলের সাথে ১ চা চামচ মধু বা এক কাপ লাল চায়ের সাথে আধ চা চামচ কালোজিরের তেল মিশিয়ে তিনবার দিনে নিয়ম করে খেলে, পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালিজিরা বেঁধে শুকালে, শ্লেষ্মা তরল হয়। আবার, এক চা-চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা-চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসি পাতার রস মিশিয়ে খাওয়া হলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি কমে। বুকে কফ জমে গেলে কালিজিরা বেটে খলে তা অত্যন্ত উপকার করে।
৫.নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চাচল দ্রুত হয়। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হয় যা আমাদের স্মৃতি শক্তিকে ধরে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।৬.কালোজিরার তেল মাথা ব্যাথার জন্য পুরোনো ঘরোয়া একটি প্রতিকার।মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে দ্রুত তা আমাদের সাহায্য করে।৭. শিশুকে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ালে দ্রুত দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। কালোজিরা শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থ রাখা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।৮. মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ না থাকলে, তাদের মহৌষধ কালোজিরা। প্রসূতি মায়েরা প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বাড়বে। তাছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সাথে খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। আবার ১ চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুর সাথে দিন ৩বার করে নিয়মিত খেলেও শতভাগ উপকার পাওয়া যায়।
৯.নিয়মিত কালোজিরা সেবনে চুলের গোড়ায় পুষ্টি ঠিকমতো পৌছায়।ফলে চুলের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। অনেকেরই চুল কমে যাওয়া, দুর্বল চুল, শুষ্ক চুল ইত্যাদি নানা রকম সমস্যা থাকে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে কয়েকবার কালোজিরার তেলের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে চুলের সমস্যা দূর করা প্রয়োজন।১০.যারা ডায়েট করেন তাদের জন্য কালোজিরা দারুণভাবে কাজ করে। রুটি ও তরকারিতে ব্যবহার করলে, মধু ও পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে তা আমাদের মেদ কমাতে বিশেষভাবে সহায়তা করেন। কালোজিরা ওটমিল ও টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।১১.. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে কালোজিরার জুড়ি নেই।যারা নিয়মিত কালোজিরা খায় তাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। এতে করে যে কোনও জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে কালোজিরা। দেহকে প্রস্তুত করে সব জীবানুর বিরুদ্ধে লড়তে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
১২.হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুক্তভুগিরা কালোজিরা ব্যাবহারে অনেক বেশি উপকারী। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়। কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাস কষ্টজনিত সমস্যা দূর করে সুস্থ জীবন দান করে।এছাড়াও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে,আমাশয় রোগ নিরাময়ে,রাতে শান্তিতে ঘুমাতে কালোজিরার উপকারিতার জুরি নেই।