তারাবিহ নামাজ নিয়ে প্রচলিত যে ভুল ধারনা রয়েছে সে ব্যাপারে আমাদের সঠিক তথ্য জানা দরকার । ইসলাম সব সময় সহজ এবং শান্তির ধর্ম । শুধু সঠিক ভাবে না জানার জন্যে আমরা একে কঠিন মনে করি । প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত ইসলাম কে জানা ,বোঝা এবং সঠিক নিয়মে চলা । রমজান মাস একটি অতি ফজিলত পূর্ন মাস। আল্লাহপাকের অশেষ রহমতের মাসে আমাদের ব্যাক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য এ মাসে আমরা কুরআন -সুন্নাহর নিয়ম মেনে অনেক ইবাদত করি।তার মধ্যে অন্যতম ইবাদত হচ্ছে তারাবিহ সালাত আদায় করা।
রমজান মাসে এশার নামাজের পর বেতর নামাজটুকু বাকি রেখে যে সুন্নত নামাজ আদায় করা হয়,তাকে তারাবিহ বলে। আরবিতে এই তারাবিহ (تَرَاوِيْح) শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘বিশ্রাম করা’। রাত জেগে লম্বা কেরাতে প্রতি ৪ রাকাত নামাজ আদায় করার পর পর সামান্য বিশ্রাম গ্রহণ করার মাধ্যমে যে নামাজ আদায় করা হয় হয় তাই হচ্ছে মূলত তারাবিহ নামাজ।রাতের এ নামাজে রয়েছে অনেক ফজিলত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত রমজানের রাতের (তারাবিহ) নামাজ সাওয়াবের নিয়তে পড়বে, তার জীবনের আগের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসের রাতের (তারাবিহতে) নামাজে শত শত (শ’-এর ওপর) আয়াত পড়তেন। হজরত সাঈর ইবনে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত ভাষ্যে তিনি বিলেন, “সুদীর্ঘ সময় দাঁড়ানোর কারণে আমরা লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম।” (মুয়াত্তা মুহাম্মদ)।
তারাবিহ নামাজের নিয়ত :যেকোন নামাজের নিয়ত যে আরবিতেই করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নিয়ত যার নিজের ভাষাতেই করা যায়।যেমন,আমরা বাংলায় নিয়ত বাধতে পারি।তারাবিহ’র দুই রাকাত নামাজ, আল্লাহর ওয়াস্তে আমি কেবলামুখী হয়ে তারাবি’হর দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করছি (এ ইমামের পেছনে)- (اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার।তারাবিহ যেভাবে পড়বেন :২ রাকাত করে আলাদা নিয়তে ৪ রাকাত নামাজ পড়তে হবে। ৪ রাকাআত পড়ার কিছুক্ষণ পর বিশ্রাম নেয়া। সেই সময় তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার পড়া। গোনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।সামান্য বিশ্রামের পর আবার ২ রাকাত করে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করা। কিছু বিশ্রাম নিয়ে আবার নামাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।প্রতি ৪ রাকাত নামাজ পড়ার পর বিশ্রামের সময় অনেকেই আল্লাহর কাছে দোয়া করে থাকেন। অনেকে আবার মুনাজাতও করে থাকেন। প্রতি ৪ রাকাতে মুনাজাত না করে একেবারে শেষে করলেও হয়।
তারাবি’হ নামাজের দোয়া :মুনাজাত এর পর তারাবিহ নামাজের পর নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তবে গোনাহমুক্ত জীবন লাভে তাওবা-ইসতেগফারের বিকল্প নেই।আমাদের দেশে তারাবিহ নামাজ নিয়ে বহুল প্রচলিত একটি দোয়া আছে, যা তারাবিহ নামাজে পড়া হয়। অনেকেই দোয়াটি জানে,যেহেতু দোয়াটি ব্যাপকভাবে পড়া হয়। চাইলে এ দোয়াটিও প্রতি ৪ রাকাআত পর পর পড়া যেতে পারে। দোয়াটি হলো_سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِউচ্চারণ : ‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়া’য়ি ওয়াল যাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালা’য়িকাতি ওয়াররুহ। এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে,তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাত পর পর শুধু এ দোয়াটিই পড়তে হবে। যে কোনো দোয়া-ই পড়া যেতে পারে। তাতে তারাবিহ নামাজের কোনো অসুবিধা হবে না।
তারাবিহ নামাজ শেষে মুনাজাত :তারাবিহ নামাজ শেষ হলে সবাই সমবেতভাবে মুনাজাত করে। আবার অনেকে একাকি মুনাজাত করে। সমবেত হোক আর একাকি হোক যে কোনো দোয়া দিয়ে করা যেতে পারে মুনাজাত।মনের একান্ত কথাগুলো যেভাবে ইচ্ছা মহান আল্লাহর কাছে তুলে ধরা যায়। তবে তারাবিহ নামাজের দোয়ার মতো মুনাজাতেরও একটি ব্যাপক প্রচলিত দোয়া রয়েছে। ইচ্ছা করলে এ দোয়াটিও পড়া যায়। সেটি হলো-
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া না’উজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান’নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফারু, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিকু ইয়া বাররু। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান’নার। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’
রমজানমাসে অনেকে এ দোয়াও বেশি বেশি পড়ে থাকেন-اَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ اﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আ’ন্নি।- তাছাড়াও তারাবিহ নামাজের পর সাইয়্যিদুল ইসতেগফারও পড়া যেতে পারে-اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।
মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহা অনুগ্রহের মাস এই রমজান। অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসের মর্যাদা অনেকগুন বেশি। এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হলো কিয়ামু’র রমজান তথা তারাবিহ নামাজ।আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে তারাবিহ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। রাতের নামাজ (তারাবিহ) আদায়ের মাধ্যমে বিগত জীবনের সব গোনাহ থেকে মুক্তি দান করুন।(আমিন) । তারাবিহ নামাজ নিয়ে তাই আর ভূল ধারনা নয়।