যেভাবে পবিত্র ঈদ শুরু হয়েছে,তা সত্যিই সনুষ্টি দেয় তা আমাদের। আরবি শব্দ ঈদ এর অর্থ হচ্ছে আনন্দ,খুশি,অনুষ্ঠান, উৎসব ইত্যাদি। এর মূল শব্দরূপ হচ্ছে আওদ।অর্থ ফিরে আসা।লিসানুল কিতাব অভিধানে জানা যায়, আরবের লোকেরা ঈদ বলতে এমন সময়কে বোঝায়, যে সময় আনন্দ ও দুঃখ ফিরে আসে। আল মুহিত অভিধানে বলা হয়েছে,যে দুশ্চিন্তা, রোগ,দুঃখ বা এমন কিছু বারবার ফিরে আসে তাই ঈদ। আল মুনজিদ অভিধানের মতে,এমন দিনকে ঈদ বলা হয় যেদিন মানুষজনের সমাগম হয় কিংবা কোন সম্মানিত ব্যাক্তি বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণা হয়।
সাজগোজ,আনন্দ,খুশি আর নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে প্রতিবছর ফিরে আসে ঈদ। তাই ঈদের এ দিনকে বলা হয় আনন্দ ও খুশির দিন। মূলত ঈদকে এজন্যই ঈদ বলা হয়।কোরআন মাজিদে ঈদ শব্দের ব্যাবহার এভাবে হয়েছে যে, মরিয়ম তনয় ঈসা আল্লাহকে বললেন, “হে আল্লাহ,আমাদের প্রতিপালক! আসমান থেকে আমাদের জন্য খাদ্যে পরিপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন,তা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলের জন্য হবে ঈদ আনন্দোৎসব। এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন।” (সুরা-মায়িদা;আয়াত-১১৪)এই আয়াতে আসমানি খাদ্য নাজেল হওয়ার দিনটি পরবর্তীদের জন্য স্মৃতিচারণার দিন হওয়ার কারণে এই দিনকে ঈদ বলা হয়েছে।
বিশ্বনবী (সাঃ) মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করার পর প্রবর্তন হয় পবিত্র ঈদের। নবীজি (সাঃ) মদিনায় যেয়ে দেখত্র পান যে সেখানে বসবাসকারী ইহুদিরা নওরোজ উৎসব পালন করেন শরতের রাতে এবং মেহেরজান উৎসব পালন করেন বসন্তের পূর্নিমায়। এই উৎসব এ তারা নানান আয়োজন,আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদের কে এ দুটি উৎসব পালন করতে নিষেধ করলেন। তিনি বলেন,”মহান আল্লাহ তোমাদের ওই দুটি উৎসব এর বিনিময়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো পবিত্র দুটি দিন দান করেছেন।
একে তোমারা পবিত্রতার সাথে উদ্যাপন করো। হজরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, বিশ্বনবী (সাঃ) যখন মদিনায় আসেন তখন তাদের দু’টি দিন ছিল, যেদিন তারা উৎসব পালন করত। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এ দুটি দিন কিসের ? তারা বলল, “আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিন খেলাধুলা ইত্যাদি উৎসব পালন করতাম। এ নিয়মই চলে আসছে এয়দিন।” রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন। আর তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস – ১১৩৬; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস – ১৩৬৪৭)।
দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ বা ৩১ মার্চ। মুসলমান রা প্রথম ঈদের নামাজ পড়ে। ওই সময়ের ঈদে এখনকাত মতো নতুন জামাকাপড়, কেনাকাটার ধুম ছিল না।তবে খুশি আর আনন্দ ও কম ছিল না কোথাও। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বড় ছোট সকলের আনন্দের প্রতি খেয়াল রাখতেন তখন।মদিনার ছোট ছোট ছেলে শিশু-কিশোর দের সাথে আনন্দ করতেন বিশ্বনবী (সাঃ)। শরিয়ত মোতাবেক সব ধরনের আনন্দ করার অনুমতি দিতেন। বালিকা বয়সের আয়েশা (রাঃ) এর মনের ইচ্ছায় নবীজি পুরণ করতেন।
এক ঈদের দিন কিছু লোক আবিসিনিয়ায় লাঠি খেলা করছিল। নবীজি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন,হে আয়েশা, তুমি কি লাঠি খেলা দেখতে চাও? তিনি বললেন হ্যাঁ। নবীজি তখন তাঁর পেছনে আয়েশা রাঃ কে দাড় করান। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন,হে বনি আরফেদা! লাঠি শক্ত করে ধরো।আয়েশা (রাঃ) খেলা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হতে পড়লেন। নবীজি বললেন,তোমার দেখা হয়েছে? আয়েশা (রাঃ) বললেন হ্যাঁ। নবীজি বললেন,তাহলে এবার যাও। [আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত]ঈদে রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর আমলঃবিশ্বনবী (সা.) ঈদের দিন গোসল করতেন, সকাল সকাল পরিধান করতেন উত্তম পোশাক। ব্যবহার করতেন সুগন্ধি। কিছু মিষ্টি খাবার খেতেন ঈদুল ফিতরে।
নবীজি ঈদুল আজহায় কোরবানির গোশত দিয়ে দিনের প্রথম আহার করতেন।এর আগে কিছু খেতেন না। ঈদগাহে যেতেন এক রাস্তা দিয়ে, আসতেন অন্য রাস্তা দিয়ে। ঈদে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানাতেন মহানবী ।খোঁজখবর নিতেন গরীব দুঃখিদের। তারপর ঈদগাহে গিয়ে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। নামাজ শেষে খুতবা দিতেন। তিনি ঈদুল ফিতরের খুতবায় ঈদের করণীয় কাজ এবং ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব কি তা বর্ণনা করতেন।সর্বক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করতেন সাহাবায়ে কেরাম। তাঁরা এ বাক্যের মাধ্যমে ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।
তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা অর্থ- মহান আল্লাহ আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন।মাহে রমজানে গুনাহ মাফ হয়েছে কি না, তা নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকতেন সাহাবায়ে কেরাম। তাই ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন আমিরুল মু’মিনিন হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)। ঘরের দরজা বন্ধ করে তিনি বলতে থাকেন, আমার গুনাহ মাফ না হলে আমি ঈদগাহে গিয়ে কিভাবে ইমামতি করতে পারি? নতুন জামা, জুতা ও খাওয়াদাওয়ার ধুমধাম ছিল না তাঁদের ঈদে।। তবে আনন্দ কম ছিল না কোন অংশে।রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করা, তাঁকে কাছে পাওয়া এবং তাঁর নির্দেশ পালন করাই ছিল তাঁদের প্রকৃত আনন্দ। অনেক দূর থেকে সাহাবায়ে কেরাম ছুটে যেতেন মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আর তাঁর পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য।